এপ্রিল ০২, ২০২৪

Isq Murshid Song meaning in Bangla

 Jan-E-Tamanna Jan-E-Ada, Tujhe Jaisa Hai Socha Paya Wohi, 


জীবনের তামান্না, জীবনের মোহ

যেভাবে তোকে চেয়েছি সেভাবেই পেয়েছি।


Suraj Si Kirnon Sa Ek Chehra, Dekha Hai Tum Sa Maine Nahi, 


তোমার চেহারা সূর্যের আলোর মত ঝলমলে

তোমার মত এমন সুন্দর চেহারা আমি আর কারো দেখিনি।


Meri Mohabbat Ka Har Lamha, Tujhme Hi Gum Sa Gaya, 

আমার মহব্বতের প্রতিটি মুহূর্ত তোমার জন্য কষ্ট সয়ে গেছে।



Na Main Hoon Aashiq Na Main Deewana, Keh Do Mujhe Jo Piya, 


আমি প্রেমিকও নই, আমি পাগলও নই

প্রিয় তুমি আমাকে যাই বলো আমি তাই


Tera Mera Hai Pyar Amar

তোর আমার প্রেম অমর


Tu Chahe Tu Kadmon Mein Sar Rakh Doon, 

তুই চাইলে তোর পায়ে আমি আমার মাথা রেখে দিব

 


Ye Jeevan Kya Agar Mange Tu, Meri Jaan Nazar Kar Doon, 

এই জীবন যদি তুই চাস তাহলে আমি আনন্দের সাথে তা তোকে দিয়ে দিব।


Tera Mera Hai Pyar Amar,

তোর আর আমার প্রেম অমর


Noor-E-Jahan Aur Noor-E-Mohabbat, Dono Judein Tujhse Piya, 

জীবনের আলো আর মোহাব্বতের আলো

হে প্রিয় দুইটাই তোর




Pagal Ya Jogi Mujhko Kaho Tum, Haan Mera Ishq Sab Se Juda, 


তুমি আমাকে পাগল অথবা যোগী বলো

হ্যাঁ আমার প্রেম সবার চেয়ে আলাদা


Teri Hi Khatir Loon Sau Janam Main, Chahe Jo Ho Bhi Bhala, 


তোর জন্য শত বছর আমি জনম নেব

যা হবে সব ভালোই হবে।


Na Main Hoon Aashiq Na Main Deewana, Keh Do Mujhe Jo Piya, 


না আমি প্রেমিক না আমি পাগল 

তুমি যা বলো আমি তাই।


Tera Mera Hai Pyar Amar, 

তোর আমার প্রেম অমর


Tu Chahe Toh Kadmon Mein Sar Rakh Doon, 

তুই চাইলে তোর পায়ে আমার মাথা রেখে দেব।


Ye Jeevan Kya Agar Mange Tu, Meri Jaan Nazar Kar Doon, 


এই জীবন যদি তুই চাস তোর জন্য তা হাজির।



Tera Mera Hai Pyar Amar,

তোর আমার প্রেম অমর

নভেম্বর ১০, ২০২৩

উপলব্ধি (ছোট গল্প)-কবির আহমেদ

 বৃদ্ধের সারা গাল বেয়ে দরদর করে ঘাম ঝরছে। তাকে ঘিরে জনা পাঁচেক উৎসুক জনতার ভীড়। সবার মনে প্রশ্ন-এমন জায়গায় এই অশীতিপর বৃদ্ধ কেন একা বসে আছে? পথ ভুলে যায় নি তো? তার চোখে মুখে উৎকণ্ঠা, চোখে শক্তিমান লেন্সের পুরু চশমা। রাস্তার দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে। মনে হয় ঐ রাস্তায় জীবনের মূল্যবান কিছু ফেলে এসেছে সে।


'আপনের বাড়ি কই?' ভিড়ের মধ্য থেকে একজন প্রশ্ন করল। বৃদ্ধ নির্বিকার। হয়তো শোনে নি অথবা উত্তর দেবার প্রয়োজন মনে করে নি।

আবার কয়েক মিনিটের নিরবচ্ছিন্ন নিরবতা। ঘাম ঝরছে অবিরল। শীতের এই পড়ন্ত বিকেলে এমনভাবে ঘাম ঝরার কথা নয়।


* এখানে কার বাড়িতে আইছেন? কতা কন না ক্যান?'- আরেকজন জিজ্ঞেস করল।


এবার বৃদ্ধ নড়েচড়ে বসল যেন। রাস্তার দিকে তাকিয়ে এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লেন, একটু দম নিয়ে বললেন- 'আমার বড় ছেলে আমাকে এখানে রেখে গেছে। ডাক্তারের কাছে এনেছিল। বলল, 'এখানে বসেন। আমি এখনই আসতেছি।'


'আপনের ছেলে কী করে?'


'এনজিওতে চাকরি করে।'- ক্ষুধা-তৃষ্ণাতুর গলায় ঢোক গিলে বৃদ্ধ জবাব দিল ।


'থাকেন কই?'


মিরপুরে।


'ঘরে আর কে কে থাকে?'


'বউ, দুই নাতি-নাতনি, আর আমার ছেলে অসীম।'


জড়ো হওয়া জনতার এমনি অনেক প্রশ্ন। তবে এ সকল প্রশ্নে বৃদ্ধের এখানে আসার কারণ উঠে এল না। তবে এটা বুঝতে কষ্ট হল না যে, ছেলে কোন কু মতলবে বাবাকে এখানে এনেছে।


সন্ধ্যা সমাগত প্রায়। শীত তার চিরায়ত শীতলতা নিয়ে জেঁকে বসার আয়োজন করছে। পাখিরা কিচিরমিচির শব্দে তাদের ঘরে ফেরার জানান দিচ্ছে।


বৃদ্ধের পরনে লুঙ্গি ও পাঞ্জাবি। পাশে একটি ছেঁড়া ব্যাগ হারিয়ে ফেলার ভয়ে হোক অথবা ঠাণ্ডায় হোক বৃদ্ধ তার কুঁচকানো চামড়ার ডান হাতে ব্যাগটি আগলে রেখেছে।


'চাচা মিয়া হুনেন, আমার মনে অয় আপনার পোলা আপনেরে ফালায়া গ্যাছে। ' ভিড় থেকে একজন বলে উঠল। বাকি সবাই সমস্বরে সমর্থন জানাল।


বৃদ্ধ যেন প্রতিবাদ করার সাহস পেল না। ছলছল করে উঠল তার চোখ। চশমার ভেতর থেকে তার বড় বড় চোখের দিকে একটু মনোনিবেশ করলে বোঝা যাবে অভিশাপদগ্ধ এই প্রৌঢ় জীবনের প্রতি তীব্র


ঘৃণায় লজ্জায় তার তখন মরে যেতে ইচ্ছে করছিল।


'আরে উঠেন চাচা মিয়া। আমি বুঝছি আপনের পোলা আর আইবো না। আমি দোকান থাইক্যা দেখছি এক ব্যাডা আপনেরে এখানে রাইখ্যা জোরে জোরে হাইট্টা চইলা গেল। লন আমার দোকানে।'


ভিড় ঠেলে বশির ঢুকল।


বৃদ্ধ যেন কঁকিয়ে উঠল।


'না না আমি গেলে অসীম এসে আমারে খুঁজবে। সে অস্থির হয়ে যাবে।' “আর আইছে আপনের পোলা'- বলেই বশির অনেকটা জোর করে বৃদ্ধকে তার দোকানে নিয়ে গেল।


বৃদ্ধকে চা বিস্কুট দিল। বশির এক সময় এক বেসরকারি প্রাইমারি স্কুলে চাকরি করত। স্কুলের তালা খুলত, তালা লাগাত । ঘণ্টা বাজাত। বড় সুখের সময় ছিল তার। অকৃতদার বশিরের স্কুল ছিল ধ্যান জ্ঞান। অতি ভালবাসা জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনে। আর তাইতো কপালে বেশিদিন সুখ সয় নি। স্কুলের জমিজমা নিয়ে একদিন মামলা হল । মামলা চলল আনেক দিন।


একদিন আদালতের রায় হল। নজু মেম্বার

তার দলবল নিয়ে বাঁশগাড়ি দিয়ে দখল নিল। স্কুলের বুক নয়, বশিরের বুকটাই যেন চিরে দিয়ে গেল। যে মাঠে কচিমনের শিশুরা গোল্লাছুট-ফুটবল খেলে দাপিয়ে বেড়াত, আজ সেখানে আড়তের ধান শুকানো হয়। পরিবর্তনের হাওয়ায় যে ধানী জমিতে একদিন স্কুল হয়েছিল, সেখানে আজ সাহেবি খোলসে শুকনো ধান গড়াগড়ি খাচ্ছে ।


'তা চাচা মিয়া,অহন আপনের বিত্তান্ত হুনান।- বশির বলল। 'আপনের বউ পোলা কেমন আদর যত্ন করত?


বিষণ্ণ মনে বৃদ্ধ এতক্ষণ দূর দিগন্তে তাকিয়ে ছিল। বশিরের কথায় তার ঘোর কাটল। দু'গাল বেয়ে অঝোরে নেমে এল শ্রাবণের ঢল। বলতে গিয়েও কোন কথা বের হল না। বুকের জমানো ব্যথায় আটকে গেল তার কথা ।


“বাদ দ্যান চাচা মিয়া। আমি বুইজা ফালাইছি । আপনে তো কইতে পারবেন না। পোলার মান সম্মানের কতা চিন্তা কইরা অফ যাইবেন। কিন্তু আপনাগো মত শিক্ষিত না অইলেও আমি বুজবার পারছি।' জীবন যুদ্ধে পোড় খাওয়া বশির দার্শনিকের মতো মাথা নাড়ে আর স্বগতোক্তি করে।


পরের দিন সকালে যথারীতি দোকান খোলে। হঠাৎ চেয়ে দেখে সে দূরের কুয়াশাচ্ছন্ন পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে তার জীবন সায়াহ্নের অশেষ ক্লান্তি। দু'গালে অশ্রুর শুকিয়ে যাওয়া চিহ্ন। সারারাত কেঁদেছে। আশা করেছে সকালে ছেলে আসবে, তাকে নিয়ে যাবে। কিন্তু জীবনের স্রোত তো আর কারো নিজস্ব ছকে বাঁধা নিয়মে চলবে না। নিয়তি তার আপন অহমিকায় হরহামেশাই মানুষের সাজানো গুছানো ডেরাকে তছনছ করবেই। আর মানুষ আবারো মনের মাধুরি মিশিয়ে তার ঘর আঙিনা গোছাবে। আশা আর বিশ্বাসের চোরাবালিতেই পা রাখবে।


বৃদ্ধের ছিল সাজানো বাগান। একমাত্র সন্তানকে সর্বোত্তম ত্যাগে মানুষ করেছে। কখনো কোনো আঁচড় লাগতে দেয় নি। যখন যা চেয়েছে দিয়েছে। শহরের সবচেয়ে নামী স্কুল-কলেজে লেখাপড়া করিয়েছে। মা-বাবা তো কোনো বিনিময়ের আশায় সন্তানকে বড় করে না। সন্তানের জন্য সবচেয়ে ভালোটা নির্বাচন করে। অথচ সন্তান আজ কী দিয়েছে? বোঝা মনে করে পরিত্যাগ করেছে। প্রতারণা করে, ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে শেয়াল কুকুর মনে করে ফেলে দিয়ে গেছে। দুবেলা আহার পর্যন্ত ঠিকমতো দেয় নি। কত সুস্বাদু খাবারের ঘ্রাণ পেয়েছে নাকে, অথচ প্লেটে পেয়েছে বাসি নরম ভাত, বাসি ব্যঞ্জন। প্রথম প্রথম মনে করেছে, ঘ্রাণশক্তি হয়তো লোপ পেয়েছে। অথবা বুড়ো বয়সের ভ্রম,ভীমরতি । আস্তে আস্তে সে ভ্রম কেটেছে। আজ তো দিনের আলোর মতো সব পরিস্কার। তবুও সব কিছু স্বপ্ন মনে করে সে ভুলে যেতে চায়।


বশিরের জীবন থেকেও হারিয়ে গেছে নুরি। যাকে প্রাণপণ ভাবেসেছিল সে। যার মায়াময় মুখটাতে পৃথিবীর সমস্ত সুখ এসে জড়ো হয়েছিল। যে মুখ দেখলে তৃষ্ণা মিটে যেত, চাঁদকে দেখার আগ্রহ নিভে যেত। অথচ আজ । দক্ষিণের তালপুকুরের আশপাশ এখনো শুভরে ওঠে নুরির স্মৃতিতে। একদিন হঠাৎ নুরি অসুস্থ হয়ে পড়ল। খবর পেতেই দ্রুত ধাবমান ঘোড়ার মতন ত্বরিৎ গিয়ে দেখল উঠোনে নুরি মৃতবৎ শায়িত। হাত পা ঠাণ্ডা। আকাশ ভেঙে পড়ল । কানে শুধু ঝিঁ ঝিঁ পোকার শব্দ হচ্ছিল। বশিরের মাথায় কিছুই কাজ করছিল না । নুরির মাকে হাতে পায়ে তেল মাখতে বলে মিনিট দশেকের মধ্যে ভ্যান

নিয়ে আসে । ভ্যানে করে সেই অমাবশ্যার অন্ধকারে নিয়ে যায় হাসপাতালে। বিয়ের জন্য জমানো সমস্ত টাকা ঢেলে দিয়ে বাঁচাতে পেরেছিল নুরিকে ।


বশির আজ ভাবে, 'মানুষ এত স্বার্থপর,অমানুষ হয় ক্যামনে!' নিজের কাছে নিজে প্রশ্ন প্রশ্ন করে উত্তর খুঁজে পেতে ভীষণ কষ্ট হয় । সেই কষ্ট বুকের মাঝখানটাতে এখনো পাথরের মত চেপে আছে । যেদিন স্কুলের চাকরি চলে গেল, তারপর থেকে নুরির মধ্যে অদ্ভুত পরিবর্তন দেখা গেল। প্রথম প্রথম বশির আমলে নেয় নি।


একদিন দুপুরে জয়নাল হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে খবর দিল, 'তুই এহানে বইয়া রইছত, খবর কিছু রাখস? “ক্যান কি অইছে ?’-নির্বিকার বশিরের প্রশ্ন । তবে ভেতরে ভেতরে সে বেশ ভয় পেয়েছে। কারণ জয়নাল যে কেনো কথা নাটকীয় বা অতি নাটকীয় ভঙ্গিতে বলে ঠিকই, তবে তার কথায় সত্যতা থাকে। জয়নাল যা বলল তার সারমর্ম এই, আজ কাক ডাকা ভোরে কাদের ভ্যানওয়ালার সাথে নুরি পগার পাড়ি দিয়েছে। বশিরের মনে হয়েছে কে যেন গরম শিসা ঢেলে তার দুই কান স্তব্ধ করে দিয়েছে। তার দম বন্ধ হয়ে এল। চিৎকার করে সে কেঁদে উঠল । সারা উঠোনে সে শিশুর মত হাত পা ছুঁড়ে গড়াগড়ি দিয়ে কেঁদেছে।


প্রিয়জন নির্মমভাবে ছেড়ে চলে গেলে কেমন অনুভূত হয়, বশির তা মর্মে মর্মে টের পায়। বৃদ্ধের জন্য তাই তার মায়া হয়। সাথে সাথে তার নিস্তরঙ্গ জীবন- নদে বিক্ষুব্ধ দোলা লাগে,বুকের পুরনো ব্যথা টনটন করে জেগে ওঠে।


মানুষ কখনো অস্তায়মান সূর্যকে প্রণতি জানায় না। এ সমাজ শুধু অর্থবান আর শক্তিমানদের শ্রদ্ধা করে। আজ বৃদ্ধ ও বশির জীবন্মৃত। এ সমাজে তাদের প্রয়োজন ফুরিয়েছে। অর্থ ক্ষমতা তাদের নেই। অবজ্ঞা আর অপ্রীতি তাদের প্রাপ্য। তাদের প্রিয়জনেরা তা দিতে কুণ্ঠাবোধ করে নি। জীবনের শেষ বেলায় তাদের উপলব্ধি—সত্যিকার মানুষ যাকে ভালবাসার তাকে ভালবাসবেই। আর বিনিময়ে স্বার্থগৃধ্নুরা তাদের ঘৃণ্য লোলুপতা প্রদর্শন করবেই। তাই বলে পৃথিবীতে ভালবাসার স্রোতবতী নদীর নিরন্তর পথচলা তো আর থেমে যাবে না।

'লোকনিরুক্তি' বলতে কী বোঝায়?

 লোকনিরুক্তি (Folk Etymology / Popular Etymology)


'নিরুক্তি' একটি সংস্কৃত শব্দ যার অর্থ 'ব্যাখ্যা' বা 'ব্যাখ্যা করা'।

অচেনা শব্দকে চেনা শব্দের ছকে ফেলে অর্থ করাই হচ্ছে 'লোকনিরুক্তি'।


অনেক সময় বিদেশি শব্দকে কিংবা উচ্চারণ কঠিন দেশি শব্দকে সহজ ও পরিচিত রূপ দেয়া হয় । এতে ঐ শব্দের তৎপর্য বোঝা যায় বটে, তবে মূল শব্দ থেকে তা অনেক পৃথক হয়ে যায়| এই প্রক্রিয়ার নাম 'লোকনিরুক্তি'।


অন্যভাবে বলা যায়,লোকমুখে প্রচলিত হতে হতে ধ্বনি সাম্যের কারণে অনেক শব্দ বিকৃত হয়ে সম্পূর্ণ নতুন অবয়ব ধারণ করে। শব্দের ব্যুৎপত্তি না জানার কারণে এই বিকৃতি হয় এবং এভাবেই তার বিস্তৃতি ঘটে। এই প্রক্রিয়ার নাম 'লোকনিরুক্তি'।


যেমন

ইংরেজি 'Arm chair' শব্দ থেকে হয়েছে আরাম (arm) চেয়ার।

তেমনই 'Hospital' শব্দ হয়েছে  'হাসপাতাল'।

পর্তুগিজ শব্দ 'আনানস' থেকে হয়েছে 'আনারস'।



এপ্রিল ২৭, ২০১৭

ব-ফলা ব্যবহারে যে ভুলটি প্রায়শ দেখা যায়


কেউ কেউ "স্বপরিবার" এ ভ্রমণ করে ঝামেলা বাঁধান। অনেকে তার "দ্বায়িত্ব" ঠিক মতো পালন করেন না। আবার কেউ কেউ আছেন নিজেকে "স্বার্থক" মনে করতে পারেন না।

এখানে মোটা দাগের তিনটি শব্দই অশুদ্ধ।

'স' - খাঁটি বাংলা উপসর্গ। এর সাথে কখনো ব ফলা যুক্ত হয়ে 'স্ব' হয় না। এর নিজের অর্থ নেই। তবে অন্য কোনো শব্দের সাথে যুক্ত হলে 'সহ বা সাথে' জাতীয় অর্থ গ্রহণ করে। তাই 'সপরিবারে' (পরিবারের সাথে) ভ্রমণ করলে সবদিক থেকেই নিরাপদ থাকা যায়। এরকম আরো কিছু শব্দ যেমন-সজল(আঁখি),সপত্নী,সবান্ধব,সহোদর ইত্যাদি।

আবার 'স্ব' একটি শব্দ বটে (উপসর্গ নয়)। এর অর্থ 'নিজ বা নিজস্ব'। যেমন- স্বভূমি,স্বনাম,স্ব স্ব এলাকা ইত্যাদি।

'দায়' অর্থ দেনা, ঋণ,বাধ্যবাধকতা ইত্যাদি। দায় থেকে এসেছে দায়ি/দায়ী,দায়িত্ব। এসব শব্দে তাই কখনো 'দ্ব' হবার প্রশ্নই আসবে না।

'সার্থক' শব্দের অর্থ সফল,অর্থপূর্ণ,জয়যুক্ত,জয়ী ইত্যাদি। এটি কখনোই স্বার্থক হবেনা। কেননা 'স্বার্থ' (স্ব+অর্থ) অর্থাৎ নিজ সম্পর্কীয়।  এর সাথে কখনো ক যুক্ত হলে তা হবে অর্থহীন এবং বাহুল্যদোষে দুষ্ট। 

স্বার্থ (interest) এবং সার্থক(successful, fruitful) সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থবোধক দুটি শব্দ।

তাহলে ঠিক বানান হবে- সপরিবার,দায়িত্ব,সার্থক।

আগস্ট ১৮, ২০১৬

বিদ্রোহী কবিতা-কাজী নজরুল ইসলাম

কাজী নজরুল ইসলাম 
(মে ২৪, ১৮৯৯আগস্ট ২৯, ১৯৭৬)
বিদ্রোহী কবিতা

বল বীর-
বল উন্নত মম শির!
শির নেহারী' আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রীর!
বল বীর-
বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি'
চন্দ্র সূর্য্য গ্রহ তারা ছাড়ি'
ভূলোক দ্যূলোক গোলোক ভেদিয়া
খোদার আসনআরশছেদিয়া,
উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাতৃর!
মম ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!
বল বীর-
আমি চির-উন্নত শির! আমি চিরদুর্দম, দূর্বিনীত, নৃশংস,
মহাপ্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস!
আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর,
আমি দূর্বার,
আমি ভেঙে করি সব চুরমার!
আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল,
আমি লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল!
আমি মানি না কো কোন আইন,
আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম ভাসমান মাইন!
আমি ধূর্জটী, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল-বৈশাখীর
আমি বিদ্রোহী, আমি বিদ্রোহী-সুত বিশ্ব-বিধাতৃর!
বল বীর-
চির-উন্নত মম শির! আমি ঝঞ্ঝা, আমি ঘূর্ণি,
আমি পথ-সম্মুখে যাহা পাই যাই চূর্ণি
আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ,
আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ।
আমি হাম্বীর, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল,
আমি চল-চঞ্চল, ঠমকিছমকি
পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি
ফিং দিয়া দেই তিন দোল্‌;
আমি চপোলা-চপোল হিন্দোল।
আমি তাই করি ভাই যখন চাহে মন যা’,
করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা,
আমি উন্মাদ, আমি ঝঞ্ঝা!
আমি মহামারী, আমি ভীতি ধরীত্রির;
আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ণ চির অধীর।
বল বীর-
আমি চির-উন্নত শির! আমি চির-দূরন্ত দুর্মদ
আমি দূর্দম মম প্রাণের পেয়ালা হর্দম্হ্যায় হর্দম্ভরপুর্মদ। আমি হোম-শিখা, আমি সাগ্নিক জমদগ্নি,
আমি যজ্ঞ, আমি পুরোহিত, আমি অগ্নি।
আমি সৃষ্টি, আমি ধ্বংস, আমি লোকালয়, আমি শ্মশান,
আমি অবসান, নিশাবসান। আমি ঈন্দ্রাণী-সুত হাতে চাঁদ ভালে সূর্য
মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণ তূর্য; আমি কৃষ্ণ-কন্ঠ, মন্থন-বিষ পিয়া ব্যথা বারিধির।
আমি ব্যোমকেশ, ধরি বন্ধন-হারা ধারা গঙ্গোত্রীর।
বল বীর-
চির-উন্নত মম শির! আমি সন্ন্যাসী, সুর সৈনিক,
আমি যুবরাজ, মম রাজবেশ ম্লান গৈরিক।
আমি বেদুইন, আমি চেঙ্গিস,
আমি আপনারে ছাড়া করি না কাহারে কূর্ণিশ।
আমি বজ্র, আমি ঈষাণ-বিষানে ওঙ্কার,
আমি ইস্রাফিলের শৃঙ্গার মহা-হুঙ্কার,
আমি পিনাক-পাণির ডমরু ত্রিশুল, ধর্মরাজের দন্ড,
আমি চক্র-মহাশঙ্খ, আমি প্রণব-নাদ প্রচন্ড!
আমি ক্ষ্যাপা দুর্বাসা, বিশ্বামিত্র-শিষ্য,
আমি দাবানল-দাহ, দহন করিব বিশ্ব।
আমি প্রাণ-খোলা হাসি উল্লাস, -আমি সৃষ্টি-বৈরী মহাত্রাস
আমি মহাপ্রলয়ের দ্বাদশ রবির রাহু-গ্রাস!
আমি কভু প্রশান্ত, -কভু অশান্ত দারুণ স্বেচ্ছাচারী,
আমি অরুণ খুনের তরুণ, আমি বিধির দর্পহারী!
আমি প্রভঞ্জনের উচ্ছাস, আমি বারিধির মহাকল্লোল,
আমি উজ্জ্বল, আমি প্রোজ্জ্বল,
আমি উচ্ছল জল-ছল-ছল, চল ঊর্মির হিন্দোল-দোল!- আমি বন্ধনহারা কুমারীর বেনী, তন্বী নয়নে বহ্নি,
আমি ষোড়শীর হৃদি-সরসিজ প্রেম উদ্দাম, আমি ধন্যি! আমি উন্মন, মন-উদাসীর,
আমি বিধবার বুকে ক্রন্দন-শ্বাস, হা-হুতাশ আমি হুতাশীর।
আমি বঞ্চিত ব্যথা পথবাসী চির গৃহহারা যত পথিকের,
আমি অবমানিতের মরম-বেদনা, বিষ-জ্বালা, প্রিয় লাঞ্ছিত বুকে গতি ফের
আমি অভিমানী চির ক্ষূব্ধ হিয়ার কাতরতা, ব্যাথা সূনিবিড়,
চিত চুম্বন-চোর-কম্পন আমি থর থর থর প্রথম পরশ কুমারীর!
আমি গোপন-প্রিয়ার চকিত চাহনি, ছল রে দেখা অনুখন,
আমি চপল মেয়ের ভালোবাসা, তাঁর কাঁকণ-চুড়ির কন্‌-কন্
আমি চির শিশু, চির কিশোর,
আমি যৌবন-ভীতু পল্লীবালার আঁচর কাচুলি নিচোর!
আমি উত্তর-বায়ু মলয়-অনিল উদাস পূরবী হাওয়া,
আমি পথিক-কবির গভীর রাগিণী, বেণু-বীণে গান গাওয়া।
আমি আকুল নিদাঘ-তিয়াসা, আমি রৌদ্র-রুদ্র রবি
আমি মরু-নির্ঝর ঝর-ঝর, আমি শ্যামলিমা ছায়াছবি!
আমি তুরীয়ানন্দে ছুটে চলি, কি উন্মাদ আমি উন্মাদ!
আমি সহসা আমারে চিনেছি, আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ! আমি উত্থান, আমি পতন, আমি অচেতন চিতে চেতন,
আমি বিশ্বতোরণে বৈজয়ন্তী, মানব-বিজয়-কেতন।
ছুটি ঝড়ের মতন করতালী দিয়া
স্বর্গ মর্ত্য-করতলে,
তাজী বোর্রাক্আর উচ্চৈঃশ্রবা বাহন আমার
হিম্মত-হ্রেষা হেঁকে চলে! আমি বসুধা-বক্ষে আগ্নেয়াদ্রী, বাড়ব বহ্নি, কালানল,
আমি পাতালে মাতাল, অগ্নি-পাথার-কলরোল-কল-কোলাহল!
আমি তড়িতে চড়িয়া, উড়ে চলি জোড় তুড়ি দিয়া দিয়া লম্ফ,
আমি ত্রাস সঞ্চারিভুবনে সহসা, সঞ্চারি ভূমিকম্প। ধরি বাসুকির ফণা জাপটি’-
ধরি স্বর্গীয় দূত জিব্রাইলের আগুনের পাখা সাপটি আমি দেবশিশু, আমি চঞ্চল,
আমি ধৃষ্ট, আমি দাঁত দিয়া ছিঁড়ি বিশ্ব-মায়ের অঞ্চল!
আমি অর্ফিয়াসের বাঁশরী,
মহা-সিন্ধু উতলা ঘুম্ঘুম্
ঘুম্চুমু দিয়ে করি নিখিল বিশ্বে নিঝ্ঝুম
মম বাঁশরীর তানে পাশরি
আমি শ্যামের হাতের বাঁশরী। আমি রুষে উঠে যবে ছুটি মহাকাশ ছাপিয়া,
ভয়ে সপ্ত নরক হাবিয়া দোযখ নিভে নিভে যায় কাঁপিয়া!
আমি বিদ্রোহ-বাহী নিখিল অখিল ব্যাপিয়া! আমি শ্রাবণ-প্লাবন-বন্যা,
কভু ধরনীরে করি বরণীয়া, কভু বিপুল ধ্বংস ধন্যা-
আমি ছিনিয়া আনিব বিষ্ণু-বক্ষ হইতে যুগল কন্যা!
আমি অন্যায়, আমি উল্কা, আমি শনি,
আমি ধূমকেতু জ্বালা, বিষধর কাল-ফণী!
আমি ছিন্নমস্তা চন্ডী, আমি রণদা সর্বনাশী,
আমি জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি! আমি মৃন্ময়, আমি চিন্ময়,
আমি অজর অমর অক্ষয়, আমি অব্যয়!
আমি মানব দানব দেবতার ভয়,
বিশ্বের আমি চির-দুর্জয়,
জগদীশ্বর-ঈশ্বর আমি পুরুষোত্তম সত্য,
আমি তাথিয়া তাথিয়া মাথিয়া ফিরি স্বর্গ-পাতাল মর্ত্য!
আমি উন্মাদ, আমি উন্মাদ!!
আমি সহসা আমারে চিনেছি, আজিকে আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ!! আমি পরশুরামের কঠোর কুঠার,
নিঃক্ষত্রিয় করিব বিশ্ব, আনিব শান্তি শান্ত উদার!
আমি হল বলরাম স্কন্ধে,
আমি উপাড়ি' ফেলিব অধীন বিশ্ব অবহেলে নব সৃষ্টির মহানন্দে। মহা- বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত,
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল, আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না -
বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত
আমি আমি সেই দিন হব শান্ত!
আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দিই পদ-চিহ্ন,
আমি স্রষ্টা-সূদন, শোক-তাপ-হানা খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব-ভিন্ন!
আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দেবো পদ-চিহ্ন!
আমি খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন! আমি চির-বিদ্রোহী বীর -
আমি বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির!