জুলাই ২০, ২০১৫

ধ্বনি পরিবর্তনের রীতি (২)

ধ্বনি পরিবর্তনের রীতি (২)




অপিনিহিতি
পরের ই-কার আগে কিংবা যুক্তব্যঞ্জন ধ্বনির আগে ই-কার বা উ-কার উচ্চারিত হয়, যেমন-
বাক্য > বাইক্য           = যুক্তব্যঞ্জন ধ্বনির আগে ই-কার
সত্য > সইত্য            = যুক্তব্যঞ্জন ধ্বনির আগে ই-কার
পদ্য > পইদ্য            = যুক্তব্যঞ্জন ধ্বনির আগে ই-কার

করিয়া > কইরয়া         = পরের ই-কার আগে উচ্চারিত
চারি > চাইর            = পরের ই-কার আগে উচ্চারিত
রাতি > রাইত           = পরের ই-কার আগে উচ্চারিত

অভিশ্রুতি
অভিশ্রুতি হল অপিনিহিতির পরের ধাপ।
বিপর্যস্ত স্বরধ্বনি পূর্ববর্তী স্বরধ্বনির সাথে মিলে পরবর্তী স্বরধ্বনির পরিবর্তন ঘটালে তা অভিশ্রুতি। এধারণাটি বাংলায় প্রথম ব্যাখ্যা করেন সুনীতিকুমার। তাঁর কয়েকটি উদাহরণ-
করিয়া >    কইর্যাং >       রে
র+ই -à ই+র (অপিনিহিতি) ->এ (অভিশ্রুতি)
তেমনি ,  মাইয়া > মায়্যা > মেয়ে
        রাখিয়া > রাইখ্যা > রেখে
স্বরসঙ্গতি
অসম স্বরের সমতা বিধান হয় । সমীভবনের অনুরূপ ।পার্থক্য শুধু – শমীভবন ব্যঞ্জনের আর স্বরসঙ্গতি স্বরবর্ণের। স্বরসঙ্গতি চার প্রকার।  
ক. প্রগত স্বরসঙ্গতি
আদিস্বর অনুযায়ী অন্ত্যস্বর পরিবর্তিত হয়। যেমন-
পূজা > পূজো
মূলা > মূলো
বিকাল > বিকেল ইত্যাদি

খ. পরাগত স্বরসঙ্গতি
অন্ত্যস্বরের কারণে আদ্যস্বর পরিবর্তিত হয়েছে। যেমন-
দেশি > দিশি
বিলাতি > বিলেতি
নাচনি > নাচুনি ইত্যাদি
গ. মধ্যগত স্বরসঙ্গতি
পূর্বের/পরের স্বরধ্বনির প্রভাবে মধ্যস্বরের পরিবর্তন হয়।  
জিলাপি>জিলিপি   = জি/পি এর ই ধ্বনির প্রভাবে ল এর আ,ই ধ্বনিতে পরিবর্তন।    
ঘ. অন্যোন্য (পারস্পরিক)স্বরসঙ্গতি
উভয় ধ্বনিই পরস্পরের প্রভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। যেমন-
মোজা > মুজো
ধোঁকা > ধুঁকো
খোকা > খুকু ইত্যাদি

বিষমীভবন
সমীভবনের বিপরীত। সমান দুই ব্যঞ্জনের যে কোন একটি বদলে যায়।  
শরীর>শরীল    রুমাল>নুমাল

নাসিক্যীভবন
পাশাপাশি অবস্থিত নাসিক্য ধ্বনির প্রভাবে নাসিক্য ব্যঞ্জন লুপ্ত হলে এবং পূর্ববর্তী স্বরধ্বনি দীর্ঘ এবং আনুনাসিক হয়ে উচ্চারিত হলে তাকে নাসিক্যভবন বলে।যেমন-
চন্দ্র > চন্দ > চাঁদ



ক্ষতিপূরণমূলক দীর্ঘীভবন
অদ্য > অজ্জ > আজ
কার্য > কজ্জ > কাজ হয়েছে।

মহাপ্রাণীভবন
অল্পপ্রাণ ধ্বনি মহাপ্রাণ ধ্বনিতে যেমন-
পাশ > ফাঁস
থুতু > থুথু পরিবর্তিত হয়।

অল্পপ্রাণীভবন
মহাপ্রাণ ধ্বনি অল্পপ্রাণ ধ্বনিতে যেমন-
মাঝ > মেজো
কাঠ > কাট
মাঠ > মাট পরিবর্তিত হয়।

ঘোষীভবন
অঘোষ ধ্বনি ঘোষ ধ্বনিতে যেমন-
বক > বগ, বগা

আজকে>আজগে হয়।

অঘোষীভবন
ঘোষ ধ্বনি অঘোষ ধ্বনিতে যেমন-
বাবু > বাপু
কাজ > কাচ হয়।

মূর্ধন্যীভবন
এ প্রক্রিয়ায় মূর্ধন্য ধ্বনির প্রভাবে দন্ত্য ব্যঞ্জন ধ্বনি মূর্ধন্য ধ্বনিতে পরিণত হয়। যেমন-
অস্থি > আঁঠি
কৃত > কট।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন